ধারাবারিষার প্রাচীনতম মসজিদ ও দরগাশরীফ
বিশ্বরোড হবার পূর্বে রাজশাহী নাটোর হয়ে গুরুদাসপুর আসার পথে পশ্চিম পার্শ্বে আমবাগানের মধ্যে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। পলশুড়া পাটপাড়ায় অবস্থিত এ মসজিদ দেখে ধারণা করেন এটি প্রায় চারশত বছর পূর্বে নির্মিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার প্রাক্কালে তৎকালীন গুরুদাসপুর থানার উন্নয়ন বিভাগীয় সার্কেল অফিসার জনাব সৈয়দ আরিফুল হুদা সাহেবের চেষ্টায় চারপাশ পরিষ্কার করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। অতীতে এখানে জাঁকজমক সহকারে মহররমের উৎসব হত। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে একটা পুকুর ছিল। সেটা প্রায় ১৯০০ সালের প্রথম দশকের দিকে সংস্কার করা হয়। মসজিদের দক্ষিন দিক হতে যে নদী প্রবাহিত তার নাম তুলসি নদী। এ নদীটি পদ্মা হতে উৎপন্ন হয়ে সোনাবাজুর উত্তর দিক ও পলশুড়া পাটপাড়ার দক্ষিন দিয়ে এবং শিধুলী ও আইড়মাড়ী বিলের মধ্যে দিয়ে চেঁচুয়া নদী ও কিণু সরকারের ধর হয়ে বড়াল নদীতে পড়েছে। চেঁচুয়া নদী হল ধারাবারিষা গ্রামের দক্ষিন পাশি দিয়ে কৈ-খোলার বিল, চাতরার বিল ও জরদার জোলা হয়ে আফরার বিলের মধ্যে দিয়ে খলিশাগাড়ী বিলে গেছে। সেখান থেকে কিণু সরকারের ধর হয়ে বওসা নদীতে মিশে পরে বড়াল নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। মসজিদ, পুকুর, দরগা শরীফ দেখে বলা যায় পলশুড়া এককালে উন্নত ছিল। পাটপাড়া ছাড়াও শিধুলী গ্রামে প্রাচীন মসজিদ আছে। শিধুলী মসজিদের পূর্ব পাশে একটা দোচালা ঘরে প্রচুর মূর্তি ছিল।
পাটপাড়ায় দরগা শরীফ নামক স্থানে দুটি কবর আছে। অতীতকালে লোকজন এখানে কবর জিয়ারত করে সিন্নি বিতরণ করত। পাকিস্তান ভারত পৃথককালে (১৯৪৭) লোকে এ দরগায় বাতি ও তেল সিদুঁর দিত। অত্যন্ত সম্মান দেখাতে গিয়ে মানুষজন পায়ের জুতা খুলে, মাথার ছাতা বনধ করে ভদ্রভাবে এ এলাকা পার হতেন।
পলশুড়া ও শিধূলী গ্রামে নাটোর রাজাদের কর্মচারী ছিল। নাটোরের রাজা বীরেন্দ্রনাথের শাসনামলে () রাজা বীরেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর পাটপাড়া দরগাশরীফের জন্য বার বিঘা পীরপাল জমি দান করেছিলেন। তিনি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন পাঠ করতেন। কুরআন শরীফ পড়ে এবং অন্যান্য ইসলামী গ্রন্থ পাঠ করার পর রাজা মুসলমানেদের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। কোন এক দিন রাজা কোরআন শরীফ পাঠকালে হাঁসমারী গ্রামের হাজি মসলেম উদ্দিন মিয়া রাজার কুরআন পাঠে ভুল পান। জনাব মসলেম উদ্দিন মিয়া রাজার কুরআন পড়া সংশোধন করে দিলে রাজা খুশি হয়ে হাজি সাহেবকে বত্রিশ বিঘা জমি দান করেন। যে জমির কোন খাজনা কর দিতে হত না। রাজা কুরবাণী দেবার জন্য কয়েকটি উট কিনেন কিন্তু যখন শুনলেন মুসলমান না হলে কুরবাণী সহিয় হয় না তখন তিনি পরিবার বর্গের নিকট মুসলমান হবার সিদ্ধান্ত জানালেন। কিন্তু রাজার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন রাজাকে মুসলমান না হতে অনুরোধ করেন। ফলে রাজা মুসলমান না হয়ে উটগুলো পলশুড়া, পাটপাড়া, ধারাবারিষা প্রভৃতি গ্রামের মুসলমান প্রজাদের মধ্যে দান করেন। রাজার নানা রকম খামখেয়ালী অাচরণের জন্য এ রাজাকে ‘পাগলা রাজা’ বলা হত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস